করোনায় ২৪ঘন্টায় মারা গেছে ১৬৪ জন। আকান্ত প্রায় ১০ হাজার এক দিনে এতো মৃত্যু দেখিনি বাংলাদেশে


 গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৬৪ জন, যা দেশে মহামারিকালে একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু। করোনায় এত মৃত্যু এর আগে দেখেনি বাংলাদেশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৯৬৪ জন। একদিনে দৈনিক শনাক্তের এত সংখ্যা এর আগে দেখেনি বাংলাদেশ।

গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৬৪ জনকে নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ হাজার ২২৯ জন। এর আগে রোববার মারা গেছে ১৫৩ জন, যা আগের সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। একদিনের ব্যবধানে আগের রেকর্ড ভেঙে মৃত্যুতে নতুন রেকর্ড হলো দেশে। এর আগে ৩ জুলাই ১৩৪ জন, ২ জুলাই ১৩২ জন মারা যান। ১ জুলাই মারা যান ১৪৩ জন। তারও আগে ৩০ জুন ১১৫ জন, ২৯ জুন ১১২ জন, ২৮ জুন ১০৪ জন এবং ২৭ জুন মারা যান ১১৯ জন। এ নিয়ে টানা ৯ দিন ধরে দৈনিক মৃত্যু একশ’ ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আরও বলা হয়, নতুন শনাক্ত হওয়া ৯ হাজার ৯৬৪ জনকে নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে শনাক্ত হলেন ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮১ জন। এর মধ্যে দিয়ে দেশে করোনায় শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৯ লাখ ছাড়িয়ে গেলো।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন পাঁচ হাজার ১৮৫ জন। তাদের নিয়ে এখন পর্যন্ত সুস্থ হলেন আট লাখ ৩৯ হাজার ৮২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৩০ শতাংশ, এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৫৯ শতাংশ।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নমুনা সংগৃহীত হয়েছে ৩৫ হাজার ৪২টি, আর নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৩৪ হাজার দুইটি। দেশে এখন পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৬৭ লাখ ৫৭ হাজার ৫৬২টি। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৯৭টি এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ লাখ ২০ হাজার ২৬৫টি।
গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৬৪ জনের মধ্যে পুরুষ ১০৯ জন, আর নারী ৫৫ জন। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে পুরুষ মারা গেলেন ১০ হাজার ৭৮৫ জন এবং নারী মারা গেলেন চার হাজার ৪৪৪ জন।
বয়স বিবেচনায় ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব রয়েছেন ৮৩ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৪৭ জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৮ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ১২ জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে চার জন।
বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে তাদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৪০ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১৮ জন, রাজশাহী বিভাগের ১৬ জন, খুলনা বিভাগের ৫৫ জন, বরিশাল বিবাগের ৯ জন, সিলেট বিভাগের আট জন, রংপুর বিভাগের ১৬ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগের মারা গেছেন দুই জন।
মারা যাওয়া ১৬৪ জনের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে মারা গেছেন ১২৩ জন, বেসরকারি হাসপাতালে ২৫ জন এবং বাড়িতে মারা গেছেন ১৫ জন। হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে একজনকে।
এদিকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী, বরিশাল, খুলনা ও ময়মনসিংহসহ দেশের ২১ জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে ১৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রাপ্ত খবর বলছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে করোনা আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন ও উপসর্গ নিয়ে ১৩ জন মারা গেছেন। রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ১৮ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ জন ও নারী ছয়জন রয়েছেন। মৃতদের অধিকাংশের বয়স ৩৫-৬৫ বছরের মধ্যে।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতদের মধ্যে রাজশাহীর আট জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন, নাটোরের তিনজন, নওগাঁর চারজন ও পাবনার একজন ও কুষ্টিয়ার একজন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়ে রাজশাহীর চারজন ও নাটোরের একজন মারা গেছেন। উপসর্গে রাজশাহীর চারজন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন, নাটোরের দুজন, নওগাঁর চারজন, পাবনার একজন ও কুষ্টিয়ার একজন। মৃতদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রোগীদের ভর্তি ও সংক্রমণের বিষয়ে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৬৯ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪৮ জন। রামেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ২১০ জন এবং সন্দেহভাজন ও উপসর্গ নিয়ে ২৮৫ জন ভর্তি রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকে ৪০৫টি শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিলেন ৪৯৫ জন।
করোনা পরীক্ষা নিয়ে পরিচালক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালের পিসিআর মেশিনে ২৮২টি নমুনা পরীক্ষায় ৮১ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে। মেডিকেল কলেজের পিসিআর মেশিনে ৩৭২টি নমুনা পরীক্ষায় ১৩৭ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। দুই ল্যাবের টেস্টে মোট ৬৫৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ২১৮ জনের করোনা পজিটিভ এসেছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৩৪ দশমিক ০৯ শতাংশ।
এদিকে, নাটোর সদর হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু হয়েছে। টাঙ্গাইল ২৪ ঘণ্টায় করোনায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছেন ২২৭ জন। ফরিদপুরে করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ফরিদপুরে আরও ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুর পিসিআর ল্যাবে ৩৭০ নমুনা পরীক্ষার মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ১৯৪ জন।
ফরিদপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. সিদ্দিকুর রহমান জানান, ফরিদপুর পিসিআর ল্যাবে গত ২৪ ঘণ্টায় মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩৭০টি। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছে ১৯৪ জন। আক্রান্তের হার ৫২.৪৩ শতাংশ। জেলায় মোট আক্রান্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৬২২ জন, সুস্থ হয়েছে ১১ হাজার ৪৬৭ জন।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ওয়ার্ডে মারা গেছেন ১২ জন। এরমধ্যে পজিটিভ ছিল একজনের। উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১১ জন। খুলনা গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনার চারটি হাসপাতলে আরও ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতলে আক্রান্ত হয়ে এবং উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ১০ জন, সদর হাসপাতালে দুজন, আবু নাছের হাসপাতালে একজন এবং গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে খুলনার ৯ জন এবং বাগেরহাটের ৩ জন মারা গেছেন। বাকি ৫ জনের ঠিকানা পাওয়া যায়নি।
কুষ্টিয়া করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে এ জেলায়। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে আরও ২০ জনের। এ সময় ৮৮৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলায় এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও শনাক্ত। জেলায় এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৭৬৬ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ২৪৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫ হাজার ৮২৩ জন।  সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৮ জন। ঝিনাইদহে মারা গেছেন আরও ৮ জন। চুয়াডাঙ্গায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে জেলায়।
কুড়িগ্রামে ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে ১৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৮ জন পজিটিভ পাওয়া গেছে। আক্রান্তের হার ৩৩ দশমিক ০৪ ভাগ। জেনারেল হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেট ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ৩৪ জন। মারা গেছেন একজন।


পঞ্চগড়ে নতুন করে আরও ৪৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ সময় ১৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২২৭ জন। এ পর্যন্ত জেলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন ৮৫১ জন। পঞ্চগড় জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো.ফজলুর রহমান সময় নিউজকে জানান, পঞ্চগড়ে ১৭৭ জনের শরীরের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে আরও ৪৭ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়।
পঞ্চগড় সদর উপজেলায় ২৮ জন, তেঁতুলিয়া উপজেলায় ১২ জন, আটোয়ারী উপজেলায় ৩ জন, বোদা উপজেলায় ৩ জন ও দেবীগঞ্জ উপজেলায় একজন বলে জানান তিনি। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে যেন মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে ছয়জন করোনায় এবং ৯ জন উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। সোমবার সকাল ১০টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ডা. মহিউদ্দিন খান মুন।
চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৫৯ জন, যা একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড। এ সময় করোনায় মৃত্যু হয়েছে আরও পাঁচ জনের। শনাক্তের হার ৩৪.১২ শতাংশ। সোমবার  চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত ১ জুলাই সর্বোচ্চ ৫৫২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, চট্টগ্রামের ১০টি ও কক্সবাজারে একটি ল্যাবে এক হাজার ৬৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫৫৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চট্টগ্রাম নগরের ৪১৪ জন এবং বিভিন্ন উপজেলার ১৪৫ জন রয়েছেন।
সিলেট বিভাগে করোনা আক্রান্ত হয়ে আরও ৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সেই সাথে আক্রান্ত হয়েছেন ২৫৩ জন। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে যশোরে ১৬ জন, মেহেরপুরে ৫, বগুড়ায় ৮, দিনাজপুর ও ঝালকাঠিতে দুজন করে, মৌলভীবাজার ও ঠাকুরগাঁওয়ে একজন করে মারা গেছেন।

Post a Comment

0 Comments